বিশ্বজুড়ে মহামারি হিসেবে পরিচিত কোভিড-১৯ বাংলাদেশেও দীর্ঘ সময় ধরে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। তবে ২০২৫ সালে এসে তুলনামূলকভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যু হার অনেকটাই কমে এসেছে। তবুও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একে একেবারে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২৩ জুন) সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ২১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় ৪৪১টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই সময়ে করোনায় কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২০২০ সালে মহামারির সূচনার পর থেকে দেশে এই ভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ২৯ হাজার ৫১৮ জন মানুষ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের হার কম হলেও সতর্কতা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ বিশ্বজুড়ে এখনো নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হচ্ছে, যা অতীতের মতোই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। অনেক দেশে এখনো হঠাৎ করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় টিকাদান কম হয়েছে বা বুস্টার ডোজ গ্রহণের হার কম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সায়মা রাহমান বলেন, “বর্তমানে সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও এটি একেবারে নির্মূল হয়নি। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার অভ্যাস এখনো চালু রাখা উচিত। বিশেষ করে যারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন— যেমন বয়স্ক, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা—তাদের জন্য কোভিড এখনো বিপজ্জনক হতে পারে।”
বাংলাদেশে কোভিড টিকা কর্মসূচি বেশ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় ডোজের পাশাপাশি বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ। তবে নতুন করে বুস্টার ডোজ গ্রহণে অনীহা দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, “নতুন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে টিকার আপডেটেড সংস্করণ এবং টিকা গ্রহণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের যেকোনো মহামারি মোকাবিলায় একটি স্থায়ী স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য গবেষণা, হাসপাতাল অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনবল প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে।
বর্তমানে দেশে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও একে অবহেলা করা যাবে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মহামারি এখনও অতীত হয়নি— বরং এটি একটি চলমান বাস্তবতা, যা কখনোই নতুন করে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই প্রয়োজন জনসচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি।
Comments are closed