ঢাকা:(২৯ এপ্রিল) সারা দেশে অতিরিক্ত গরম ও তাপপ্রবাহ চলছে। চলছে আবহাওয়া অধিদফতরের ঘোষিত তিন দিনের সতর্কতা। এই সতর্কতা বাড়তে পারে আরও কয়েক দিন। তবে আবহাওয়ার এই উত্তাপ ফসলের মাঠে এনে দিচ্ছে কৃষকের মুখে হাসি। বোরো মৌসুমে ধান কাটার উৎসবের অপেক্ষায় কৃষকরা।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোরো ধান ঘরে তোলার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এরইমধ্যে হাওর অঞ্চলে সম্পন্ন হয়েছে প্রায় অর্ধেক ধান কাটা। তুলনামূলক উঁচু এলাকায় আরও ১০-১৫ দিন পর বোরো ধান কাটা শুরু হবে।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা ড. আবু জাফর আল মুনছুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গরমে ধানক্ষেতের কোনও ক্ষতি হওয়ার কোনও শঙ্কা নেই। সেচ দরকার নেই এখন। বোরো মৌসুমের কারণে আমাদের মূল দৃষ্টি আসলে গরম কবে নাগাদ কমে আসবে। কারণ, এই গরম অব্যাহত থাকলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। শিলা বৃষ্টি হলে ফসলের ক্ষতি হবে।’
গরম হলেও আপাতত ধানের কোনও ক্ষতি নাই। বরং উপকার হচ্ছে। বলছিলেন, হবিগঞ্জ জেলার কৃষক আবু জাফর মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এখন বোরো ধান প্রায় পেকে গেছে। আরও ১০-১৫ দিনের মধ্যে দাওয়া (কাটা) ধরবে সবাই। এখন বরং শিলা বৃষ্টি হলে ভয় আছে, চিটা হয়ে যাবে।’
‘ভাটির দেশে (হাওর ও তুলনামূলক নিম্নাঞ্চল) কৃষকরা ধান তুলতেছেন ঘরে। আর উজান দেশে আমরা আগৈ (বোরো সিজন শুরু হওয়ার ১৫ দিন আগে রোপণ করা ধান) ধান কাটা শুরু করবো। দুয়েক দিনের মধ্যে দাওয়া (কাটা) শুরু হবে।’
দেশের হাওর এলাকার অন্তত ৪২ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের মনিটরিং বিভাগের উপপরিচালক ড. জাফর। তিনি আশা করেন, সারা দেশ থেকে তিনি যে তথ্য পেয়েছেন, সেসব বিবেচনা করলে আগামী সাত দিনের মধ্যে আরও বাকি ধান কাটা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘এপ্রিল মাসের মধ্যে বোরো ধান তোলা হয়ে যাবে, আশা করি।’
হাওর ছাড়া অন্যান্য এলাকার ধান কাটা শুরু হয় আরও ২০-২৫ দিন পর, উল্লেখ করেন আবু জাফর।
জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া গ্রামের কৃষক আসলাম মিয়া জানিয়েছেন, তীব্র গরমে কষ্ট তো হচ্ছেই। তবে মাঠের ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। সে আশঙ্কাও নেই, যদি শিলা বৃষ্টি না হয়। অপরদিকে অল্পস্বল্প পেঁয়াজ ও সরিষার চাষও করেছি। তা ঘরে উঠে গেছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারা দেশে প্রবহমান তাপপ্রবাহ আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। গত সোমবার (২২ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়ে উল্লেখ করা হয়, গরমের অনুভূতি আরও বাড়তে পারে। সোমবার থেকে সারা দেশে নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যা এখনও চলমান।
আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে ফসলের ওপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে আবু জাফরের ভাষ্য, ‘বোরো ধানে তাপজনিত ক্ষতি বা তাপপ্রবাহ হলে ধান চিটা হতে পারে। যে স্টেজে এটা হওয়ার কথা ছিল, সেটা পার হওয়ার পর গরম পড়েছে। ধানের যে ক্ষতি হতো, চিটা হতো, তা হয়নি।’
‘এখন আমাদের আশঙ্কা, এই গরমের পর আবহাওয়ায় বদল আসবে, ঝড় আসবে। এতে যদি শিলা পড়ে, তাহলে সেটা চিন্তার বিষয়। এ নিয়ে টেনশনে আছি আমরা, আর কোনও সমস্যা নেই ফসলের মাঠে’, বলেন সরেজমিন উইংয়ের মনিটরিং বিভাগের উপপরিচালক ড. আবু জাফর।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বোরো উৎপাদনের তথ্যে দেখা গেছে, স্থানীয় জাতের বদলে উচ্চ ফলনশীল জাত (উফশী) ও হাইব্রিড ধান চাষ করায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে টানা ষষ্ঠবারের মতো ধানের উৎপাদন বেড়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বোরো মৌসুমে দুই কোটি সাত লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এটি এর আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মোট চাল উৎপাদন ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে তিন কোটি ৯১ লাখ টনে দাঁড়ায়।
Comments are closed