VTVUS

NEWS24/7

নিউইয়র্ককে ‘সবার জন্য নয়, কেবলমাত্র সম্পদশালীদের জন্য’ এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জোহরান বলছেন, শহরের খরচ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে সাধারণ মানুষের পক্ষে জীবনযাপন কঠিন। তাই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, খরচ কমিয়ে নিউইয়র্ককে সাধারণ মানুষের জন্য বাসযোগ্য করে তোলার।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির নতুন আকর্ষণ হিসেবে উঠে এসেছেন ৩৩ বছর বয়সী তরুণ রাজনীতিক জোহরান মামদানি। দক্ষিণ এশীয়, মুসলিম ও অভিবাসী এই রাজনীতিক নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

তিনি নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেন ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে—যার দলে আছেন বার্নি স্যান্ডার্স ও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের মতো নেতারা। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট: “যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র আজ সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছে বিলিয়নিয়ারদের এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষক স্বৈরাচারীদের কারণে।”

তার পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে শহর মালিকানাধীন গ্রোসারি শপ চালু করা, যা সরকারি ভবনে বা জমিতে পরিচালিত হবে এবং পণ্য বিক্রি করবে পাইকারি দামে। এসব দোকান প্রোপার্টি ট্যাক্স থেকে অব্যাহতি পাবে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি কার্যকর করার পথ বেশ জটিল এবং এতে আইনি ও প্রশাসনিক বাধা রয়েছে। যদিও কানসাস, উইসকনসিন, শিকাগো ও আটলান্টায় আংশিকভাবে এই মডেল প্রয়োগ হচ্ছে, নিউইয়র্কের বাস্তবতা আলাদা।

জোহরান তাঁর বাজেট পরিকল্পনায় দেখিয়েছেন, করপোরেট কর ৭.২৫% থেকে বাড়িয়ে ১১.৫% করলে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার এবং নিউইয়র্কের সবচেয়ে ধনী ১% মানুষের ওপর এককালীন ২% কর আরোপ করে আরও ৪০০ কোটি ডলার রাজস্ব আদায় সম্ভব।

তবে বাস্তবতা হলো, রাজ্যে ইতিমধ্যে কর বাড়ানো হয়েছে ২০২১ সালে। নতুন করে কর বাড়াতে গেলে গভর্নরের অনুমোদন লাগবে, এবং বিত্তশালীরা অন্য রাজ্যে চলে গেলে রাজস্ব আদায় হুমকির মুখে পড়তে পারে।

গণপরিবহন: ফ্রি বাস, উন্নত সাবওয়ে
জোহরান চান নিউইয়র্ক সিটিতে ফ্রি বাস সার্ভিস। ২০২৩ সালে তাঁর প্রচেষ্টায় পাঁচটি বাস রুটে নয় মাসের একটি পাইলট প্রকল্প চালু হয়েছিল, যাতে খরচ হয়েছিল ১ কোটি ২০ লাখ ডলার। পুরো শহরের ৩২৭টি রুটে ফ্রি বাস চালাতে বছরে প্রয়োজন হবে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার।

সেইসঙ্গে তিনি ‘কনজেশন প্রাইসিং’-এর পক্ষে, যা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে রাজস্ব বাড়াতে পারে। যদিও নিউইয়র্কে এই নীতির বাস্তবায়ন দীর্ঘদিন ধরে আইনি ও রাজনৈতিক বাধায় আটকে আছে।


জোহরান রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ডে তাঁর সমর্থকদের বসিয়ে প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দার ভাড়া স্থগিত করতে চান। এছাড়া আগামী ১০ বছরে ২ লাখ সাশ্রয়ী আবাসন ইউনিট তৈরির এবং সরকারি হাউজিংয়ে বাজেট দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, রেন্ট গাইডলাইনস বোর্ড একটি স্বাধীন সংস্থা। সেখানে রাজনৈতিক চাপ, আইনি চ্যালেঞ্জ এবং বাড়িওয়ালাদের বিরোধিতা মাথায় রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে।


জোহরান চান স্যাংকচুয়ারি ল’জ আরও শক্তিশালী করতে, যাতে অভিবাসীরা নিরাপদ বোধ করেন। তিনি আইনি সহায়তা ও তথ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা বাড়াতে চান।

শিশুযত্নে তিনি বিনা মূল্যে চাইল্ড কেয়ার এবং ছয় সপ্তাহ থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সহায়তা ‘বেবি বাস্কেট’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি টিউশন তাঁর আরেকটি বড় প্রতিশ্রুতি।

নিউইয়র্কের বার্ড কলেজের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফাহমিদুল হক মনে করেন, জোহরান “যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতির জন্য হুমকি”। কারণ, তিনি প্রচলিত ডোনার-নির্ভর পন্থা না নিয়ে ভোটারদের চাহিদা ও সাধারণ মানুষের কণ্ঠ তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, “এই সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। করের হার নিউ জার্সির সমান করলেই তা বাস্তবায়নযোগ্য।”

তবে তাঁর অভিবাসী পরিচয়, মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় ব্যাকগ্রাউন্ড, এবং প্রগতিশীল অবস্থানের কারণে ডেমোক্রেটিক পার্টির একাংশ এবং রিপাবলিকানদের সমর্থিত ধনী শ্রেণি—উভয়ের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জোহরান মামদানি যেন ‘নিউইয়র্কের নতুন স্বপ্ন’–এর প্রতীক। তাঁর প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রয়েছে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। তবে এ কথাও সত্য, ইউরোপের বহু দেশে যেসব সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক ব্যবস্থা চালু রয়েছে, সেগুলো তিনি নিউইয়র্কে আনার চেষ্টা করছেন।

সেই প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন ভাষা যোগ করছে। এই ভাষা শোনা কতজন চাইবে, আর কতজন শুনতে বাধ্য হবে—সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Categories:

Tagged:

Comments are closed