গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন। তিনি বক্তৃতায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রূপান্তর, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকট এবং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক দায়িত্বের ওপর জোর দেন।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগণ ও ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর মাধ্যমে স্বৈরশাসন পরাভূত করার ইতিহাস পৃথিবীকে দেখিয়েছে যে সংকট যত গভীরই হোক না কেন, উত্তরণের পথ সবসময় সম্ভব। তিনি উল্লেখ করেন, দেশটিতে ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন, বিচার, প্রশাসন ও নারী অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার, বাজারভিত্তিক মুদ্রা হারের প্রয়োগ, ব্যাংক খাতের আধুনিকীকরণ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
ড. ইউনূস বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, সংরক্ষণবাদের উত্থান এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বৈষম্য উল্লেখ করেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সতর্ক করে বলেন, “তহবিলের ঘাটতি রোহিঙ্গাদের অনাহার ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি করবে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গাজায় শিশু নিহত, বেসামরিক জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার দাবি আজও প্রাসঙ্গিক।
ড. ইউনূসের ভাষণে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা অবদানকেও তুলে ধরা হয়। বর্তমানে প্রায় ৬,০০০ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।
শেষে তিনি ‘তিন শূণ্য পৃথিবী’–শব্দবন্ধে বিশ্বের নেতৃত্ব ও তরুণদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান: শূণ্য কার্বন, শূণ্য সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণ, এবং শূণ্য বেকারত্ব নিশ্চিত করে একটি ন্যায্য, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গড়ে তোলা হোক।
Comments are closed