VTVUS

NEWS24/7

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

বাংলাদেশে সফরে আসার পরদিন শুক্রবার কক্সবাজারে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তারা অংশ নিয়েছেন এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে সলিডারিটি ইফতারে।

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন আন্তোনিও গুতেরেস।

জাতিসংঘের মহাসচিব সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তায় কমানোর বিষয়টি তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে জানাবেন।

মি. গুতেরেস এ-ও বলেন, “রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন”।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পবিত্র রমজান মাসে আমি সংহতির বার্তা নিয়ে কক্সবাজারে এসেছি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সংহতি জানাই। আর তাদের উদারভাবে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশি জনগণের প্রতিও আমার সংহতি রইল।  

‘আমি এখানে এসেছি শুধু তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরার জন্য নয়, বরং তাদের সম্ভাবনার ওপর বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণে করতেও। এখানে বসবাসকারী ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আত্মসম্মানবোধ-সম্পন্ন। তারা সংগ্রামী। বৈশ্বিক সমর্থন তাদের প্রয়োজন। ’ 

তিনি বলেন, কয়েক দশকের বৈষম্য ও নিপীড়নের পর আট বছর আগে রাখাইন রাজ্যে ভয়াবহ গণহত্যার ফলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা দেশ (মিয়ানমার) ছাড়তে বাধ্য হন। সম্প্রতি আরও অনেক রোহিঙ্গা এসেছেন, যারা নির্মম নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছেন, যা সামগ্রিকভাবে মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষকে উসকে দিয়েছে।  

‘রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এখানে এসেছেন সেই মৌলিক চাহিদার জন্য, যা বিশ্বের যেকোনো মানুষেরই থাকে—সুরক্ষা, সম্মান এবং নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তা। আমি আজ অনেকের সঙ্গে দেখা করেছি ও কথা বলেছি—তাদের সাহস আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, আর তাদের দৃঢ়চেতা মনোভাব আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে,’ বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

‘অনেকেই মিয়ানমারে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এবং এখানে আসার পথের কষ্টকর অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন। তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চান—মিয়ানমারই তাদের মাতৃভূমি। নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনই এই সংকটের মূল সমাধান। ’

তবে এই মুহুর্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন উদ্যোগ কতটা সম্ভব, সেটি নিয়েও উদ্বেগের কথা জানান তিনি।

নিজের দেশ মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন প্রায় আট বছর আগে।

আট বছরে বহুবার তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু সম্ভব হয়নি।

ঘুরে ঘুরে খোঁজ নিলেন গুতেরেস

শুক্রবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান জাতিসংঘ মহাসচিব।

পরে সেখানে রোহিঙ্গা লার্নিং সেন্টার ও রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টার পরিদর্শন করেন তিনি।

সেখানে রোহিঙ্গাদের সংস্কৃতি ও জীবন যাপন সম্পর্কে ধারণা নেন। পাশাপাশি কিছু রোহিঙ্গা তরুণের সঙ্গে কথাও বলেন।

সেখানে মনোযোগ দিয়ে শুনেন শরনার্থী শিবিরের নারী ও শিশুদের কথাও।

এরপর হঠাৎ মি. গুতেরেস আশ্রয় শিবিরের কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবারের কাছে গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নেন। তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলেন।

এসব জায়গায় রোহিঙ্গা শরনার্থীদের যারা জাতিসংঘ মহাসচিবকে পেয়েছিলেন তারা অনেকেই তাদের দু:খ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।অনেকে আগামী মাস থেকে খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ কমানোর বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন।

এই ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নয়ন সংস্থার নেওয়া বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পগুলোও ঘুরে দেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব।একদিকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা অনিশ্চিত, অন্যদিকে তাদের খাবারের জন্য সহায়তা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তাদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে।এমন এক সময় শুক্রবার সারাদিনই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সময় কাটালেন জাতিসংঘের মহাসচিব। দিনের প্রথমভাগে ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের খোঁজ খবর যেমন নিয়েছেন।

Categories:

Tagged:

Comments are closed