VTVUS

NEWS24/7

মাইনুল ইসলাম, সাংবাদিক, নিউ ইয়র্ক

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জন্ম ২৮ জুন ১৯৪০। একজন বাংলাদেশী  উদ্যোক্তা, সমাজসেবক ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। তিনি ২০২৪ সালের ৮ ই আগস্ট থেকে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রেরণার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ড. ইউনূস ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ২০১০ সালে, কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেলসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস  সেই সাতজন ব্যক্তির একজন যারা নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ জন মুসলিম তালিকায় তাঁর নাম উঠে আসে।  ২০২৫ সালে, টাইম ম্যাগাজিন তার নাম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

২০১২ সালে, তিনি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হন এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি।  এর আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।  তার অর্থকর্ম সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছিলেন। তিনি গ্রামীণ আমেরিকা এবং গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড সদস্য।  ১৯৯৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদেও দায়িত্ব পালন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।  

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলন এর ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করার পরে শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত করেন।  রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসাবে দেখা শ্রম কোড লঙ্ঘনের অভিযোগে পরের দিন আপিলে তার খালাস তাকে দেশে ফিরে আসতে এবং নিয়োগকে সহজতর করেছিল। ২০২৪ সালের ৮ই আগস্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।


বিদ্যালয় জীবনে তিনি একজন সক্রিয় বয় স্কাউট ছিলেন এবং ১৯৫২ সালে পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারত এবং ১৯৫৫ সালে কানাডায় জাম্বোরিতে অংশগ্রহণ করেন। পরে, যখন ইউনুস চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করছিলেন, তখন তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হন এবং নাটকের জন্য পুরস্কার জিতেন। তিনি ১৯৫৭ সালে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৬০ সালে বিএ এবং ১৯৬১ সালে এমএ সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন। ১৯৭১ সালে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি একটি নাগরিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং অন্যান্য বাংলাদেশিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করতে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পরিচালনা করেন।  হিসেবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন।

ইউনূস দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে তার সংগ্রাম শুরু করেন ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্ভিক্ষের সময় থেকে। তিনি যখন বুঝতে পারেন স্বল্প পরিমাণে ঋণ দরিদ্র মানুষের জীবন মান উন্নয়নে অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। সেই সময়ে তিনি গবেষণার লক্ষ্যে গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। তবে ২০০৫ সালের ২ আগস্ট বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) কর্তৃক দায়ের করা একটি পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গ্রাম সরকারকে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে উদ্ভাবকদের সহায়তার জন্য ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণ ধারণা ‘ইনফো লেডি সোশ্যাল এন্টারপ্রেনারশিপ’ প্রোগ্রামের মতো কর্মসূচিকে অনুপ্রাণিত করে।


তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান। গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের খবর পাওয়ার পর, ইউনূস ঘোষণা করেন যে তিনি ১৪ লক্ষ (২০২৪ সালে প্রায় ২১ লক্ষের সমতুল্য) পুরস্কার অর্থের একটি অংশ ব্যবহার করে দরিদ্রদের জন্য কম খরচে, উচ্চ পুষ্টির খাবার তৈরির জন্য একটি কোম্পানি গড়ে তুলবেন; বাকিটা তার নিজ জেলা চট্টগ্রামে ইউনূস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং বাংলাদেশে দরিদ্রদের জন্য একটি চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহার করবেন।


২০০৭ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে, নেলসন ম্যান্ডেলা, গ্রাসা মাচেল এবং ডেসমন্ড টুটু বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত একটি গ্রুপ করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী কঠিন সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তাদের প্রজ্ঞা, স্বাধীন নেতৃত্ব এবং সততার মাধ্যমে অবদান রাখা। নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর ৮৯তম জন্মদিনের উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে এই নতুন গ্রুপ ‘দ্য এল্ডার্স’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব করেন।  রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এতে সম্মতি জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তাকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৮ই আগস্ট ২০২৪ তিনি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন।

Categories:

Tagged:

Comments are closed