রবিবার(১৪ এপ্রিল)শনিবার ১৩ এপ্রিল সোমালিয়ার সময় রাত ১২টা এবং বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে একে একে নেমে গেছে দস্যুরা। তখন জাহাজটির ৬৫ জন দস্যু নেমে বোট নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে দস্যুদের প্রধান জাহাজের ক্যাপ্টেনকে একটি চিঠি ধরিয়ে দেয়। সোমালিয়ান ভাষায় তাতে লেখা, “আপনারা এখন নিরাপদ। দুবাই পর্যন্ত আপনারা নিরাপদে গন্তব্যে যেতে পারবেন। নতুন করে আর দস্যুদের কবলে পড়তে হবে না। পড়লেও এ চিঠি দেখালে তারা ছেড়ে দেবে।” ’
জিম্মিদের মুক্তির আগ মুহূর্তের কথা এভাবেই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন কেএসআরএমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম।
জাহাজসহ জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে ২৩ নাবিকসহ জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি জিম্মি করার নয় দিনের মাথায় ২০ মার্চ দুপুরে দস্যুরা যোগাযোগ করে জাহাজ মালিকের সঙ্গে। দস্যুদের পক্ষে ইংরেজি জানা এক ব্যক্তি এ যোগাযোগ করে।
‘এরপর তাদের (দস্যু) সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ চলতে থাকে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দস্যুদের সঙ্গে আমাদের চূড়ান্ত সমঝোতা বা চুক্তি হয়। চুক্তিতে তৃতীয় কোনও পক্ষ ছিলেন না। আমাদের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা হয়েছে। দস্যুদের মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে। তবে কী পরিমাণ অর্থ এবং কীভাবে দেওয়া হয় তা জানানো সম্ভব নয়। কারন জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের আইন মানা হয়েছে। যা হয়েছে সবই আইন মেনে করা হয়েছে।’
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে জাহাজসহ নাবিকদের মুক্তি দিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। এরপর মুক্তিপণের টাকা বিশেষ একটি এয়ারক্র্যাফটে করে দস্যুদের নির্ধারিত স্থানে ব্যাগ ভর্তি করে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর মুক্তি মেলে।
এ বিষয়ে কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘মুক্তিপণ হিসেবে কত টাকা এবং কীভাবে দেওয়া হয়েছে তা সিক্রেট বিষয়। তবে মুক্তিপণ হিসেবে যে ৫ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে; ওই টাকার অঙ্কটি সঠিক নয়। জাহাজসহ নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা যা করেছি, লিগ্যাল উপায়ে করেছি। জাহাজসহ নাবিকদের সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি– এটিই আমাদের বড় পাওয়া।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তির আগে আমরা জাহাজে থাকা সব নাবিকের ভিডিও নিয়েছি। পাশাপাশি, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, সুস্থ ও ভালো আছেন। জাহাজে পানি এবং খাবারের কোনও সমস্যা বা সংকট নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটিকে পাহারা দিয়ে দুবাইয়ে পৌঁছে দিচ্ছে। আগামী ২০ এপ্রিল নাগাদ জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের পৌঁছাবে। এরপর নাবিকরা সেখানে চার-পাঁচ দিন বিশ্রাম নেবেন।’এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কবির গ্রুপের এস আর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। অর্থাৎ ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর।
Comments are closed