বিশ্বের বহু খ্যাতনামা গণহত্যা-বিষয়ক গবেষক গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানকে সরাসরি ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ডাচ সংবাদপত্র এনআরসি-র এক তদন্তে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা শনিবার (১৭ মে) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই।

তদন্তে ইসরাইলসহ ছয়টি দেশের সাতজন বিশিষ্ট গবেষকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের সকলেই গাজায় ইসরাইলি সামরিক কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। অনেকেই বলেন, তাদের সহকর্মীরাও এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত।

ইসরাইলি গবেষক রাজ সেগাল এনআরসিকে বলেন, ‘আমি এমন কাউকে চিনি না, যার কাজ আমি সম্মান করি এবং যিনি এটিকে গণহত্যা মনে করেন না। সমস্ত প্রমাণ বিবেচনায় এর বিপক্ষে কোনও গ্রহণযোগ্য যুক্তি নেই।’

আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং এনআইওডি ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার, হলোকাস্ট অ্যান্ড জেনোসাইড স্টাডিজ-এর অধ্যাপক উগুর উমিত উঙ্গর বলেন, ‘এখনও কিছু গবেষক রয়েছেন যারা নিশ্চিতভাবে বলছেন এটি গণহত্যা নয়। তবে আমি তাদের কাউকে চিনি না।’

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জার্নাল অফ জেনোসাইড রিসার্চ-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক ২৫টি গবেষণাপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গণহত্যা-বিষয়ক আটজন শিক্ষাবিদের প্রত্যেকেই গাজার পরিস্থিতিকে গণহত্যা বা গণহত্যামূলক সহিংসতা হিসেবে অভিহিত করেছেন।

প্রতিবেদনটি বলছে, ‘এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে গণহত্যা কী – তা নিয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা অভূতপূর্বভাবে একমত।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রথম মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডকে সরাসরি গণহত্যা হিসেবে ঘোষণা করে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কিছুটা সংযত ভাষায় একে ‘গণহত্যামূলক কাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজও গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে দুটি পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

এনআরসি-এর অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, এটি একটি ‘ধীরলয়ে চলমান’ গণহত্যা। তদন্তের উপসংহারে বলা হয়, ‘জনমতের বিভক্তির বিপরীতে, শীর্ষস্থানীয় গবেষকরা আশ্চর্যজনকভাবে একমত। নেতানিয়াহু সরকার এই গণহত্যার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে এবং অনেকের মতে, এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।’

এই কারণেই, এখন অধিকাংশ গবেষক কেবল ‘গণহত্যা সহিংসতা’ নয়, সরাসরি ‘গণহত্যা’ শব্দ ব্যবহারে একমত হচ্ছেন।