VTVUS

NEWS24/7

বাংলাদেশ, একটি জলবায়ু সংকটের সম্মুখীন ছোট কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যেখানে প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা এবং ভূমিধস ও দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এমন এক বাস্তবতায় বৃক্ষরোপণ বা গাছ লাগানো শুধু পরিবেশ রক্ষার কাজ নয়, বরং টিকে থাকার লড়াই।

এই অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশে গাছ লাগানো এখন আর কেবল সৌন্দর্য বা ছায়া পাওয়ার বিষয় নয়, এটি পরিবেশ, অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।

বাংলাদেশে বনভূমির হার দিন দিন কমছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে যেখানে দেশের প্রায় ১৫ শতাংশ ছিল বনাঞ্চল, সেখানে ২০২৩ সালে তা কমে এসেছে মাত্র ১০-১১ শতাংশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের অন্তত ২৫ শতাংশ ভূমি বনভূমি হওয়া উচিত টেকসই পরিবেশের জন্য।

গাছ লাগালে যা হয়:

বায়ুতে অক্সিজেন বৃদ্ধি পায়, কার্বন ডাই-অক্সাইড কমে।
মাটির ক্ষয় রোধ হয়।
বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
গ্রাউন্ড ওয়াটার বা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভারসাম্য রক্ষা করে।

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদা পারভীন বলেন, “বাংলাদেশে কার্বন নিঃসরণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের ওপর সবচেয়ে বেশি। বৃক্ষরোপণ আমাদের পরিবেশ প্রতিরক্ষা লাইনের প্রথম স্তর।”

বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো মহানগরীতে বায়ুদূষণ এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। ২০২৪ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর ৮৫ শতাংশ স্কুলের আশপাশে গাছপালা নেই।

গাছের উপকারিতা:

বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর

ছায়া দিয়ে তাপপ্রবাহ কমায়

মানসিক প্রশান্তি ও শিশুদের স্বাস্থ্য উন্নত করে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “একজন মানুষের জন্য অন্তত ২৫ বর্গমিটার সবুজ জায়গা থাকা উচিত। কিন্তু ঢাকায় সেটা ৩ বর্গমিটারেরও কম।”

বৃক্ষ শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতিরও উৎস।

সরাসরি উপকার:

ফলজ ও ঔষধি গাছ রপ্তানি আয় আনে

সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান

কাঠ, বাঁশ ও পাতার ব্যবহার গৃহনির্মাণে ও কুটির শিল্পে

খুলনার পাইকগাছায় সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে কাজ করা কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন,  “বনায়নের কারণে আমার জমিতে পানির লেভেল কমে না। পাশাপাশি ফল বিক্রি করেই আমি পরিবার চালাই।”

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর গাছ লাগানোর হার দ্বিগুণ করা গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের কার্বন শোষণ ক্ষমতা ৩০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ একটি ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তোলে। গাজীপুরের একটি স্কুলে পরিচালিত পাইলট প্রকল্পে দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রীরা যখন নিজের হাতে গাছ লাগায়, তখন তাদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

সরকার ‘সামাজিক বনায়ন’, ‘এক শিক্ষার্থী এক গাছ’ ও ‘গ্রিন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’ চালু করলেও বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে এখনও ঘাটতি রয়েছে।

মূল চ্যালেঞ্জগুলো:

জায়গার অভাব (বিশেষ করে শহরে)

জনসচেতনতায় ঘাটতি

গাছ লাগানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব

বাংলাদেশের জন্য গাছ লাগানো এখন বিলাসিতা নয়, বরং জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ প্রতিরোধ, খাদ্য ও পানির নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি গাছই একেকটি আশ্রয়স্থল।
সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত পর্যায়ে এই উদ্যোগকে আরও কার্যকর ও স্থায়ী করতে প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ের সমন্বিত পরিকল্পনা এবং সচেতনতা।

Categories:

Tagged:

Comments are closed